✍️ সম্পাদকের নোট

শুভ বৃহস্পতিবার! 👋

AgriNext Weekly (Vol. 10)-এর নতুন সংখ্যায় আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের শুভেচ্ছা রইল। 🇧🇩

দেখতে দেখতে আমরা ১০টি সপ্তাহ পার করলাম! আপনাদের ভালোবাসা আর উৎসাহই আমাদের এই পথচলার মূল শক্তি।

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এই সময়টা কৃষকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাঠজুড়ে এখন শীতকালীন সবজির সমারোহ, আর বাতাসে নবান্ন পরবর্তী প্রশান্তি। তবে বিশ্ববাজারে আমাদের কৃষিপণ্যের যে জয়জয়কার শুরু হয়েছে, তা এই প্রশান্তিকে গরূপে পরিণত করছে।

এবারের সংখ্যায় আমরা বিশেষ ফোকাস করেছি ‘বাংলাদেশি কৃষিপণ্যের বিশ্বজয়’-এর ওপর। ১৪৮টি দেশে আমাদের কৃষিপণ্য রপ্তানি এবং বিলিয়ন ডলার আয়ের যে হাতছানি, তা প্রমাণ করে—আমাদের কৃষকরাই আসল হিরো। তাদের উৎপাদিত ফসল আজ বিদেশের সুপারশপে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ নিয়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।

কৃষি এখন আর শুধু বেঁচে থাকার উপায় নয়, এটি বিশ্বজয়ের হাতিয়ার। আসুন, তথ্যে সমৃদ্ধ হয়ে আমরাও এই যাত্রার অংশী হই।

ধন্যবাদান্তে,

মসরুর জুনাইদ সম্পাদক, AgriNext Weekly

📰 কৃষি খবর সংক্ষেপে

১. তৈরি পোশাকের পরেই কৃষি: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে ও রপ্তানি বহুমুখীকরণে কৃষির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এগ্রো-প্রসেসিং ইকোনমিক জোন, কোল্ডচেইন নেটওয়ার্ক এবং জিএপি (GAP) সার্টিফিকেশন নিশ্চিতের মাধ্যমে কৃষি খাতকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি আয়ের উৎস হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে।

২. রংপুরে ‘টি-ট্রি’ বিপ্লব: রংপুরের পীরগাছায় অস্ট্রেলিয়ান ‘টি-ট্রি’ (Tea Tree) চাষ করে সাড়া ফেলেছেন প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান আরিফ। এই গাছের পাতার তেলের বাজারমূল্য প্রতি লিটার প্রায় ৫০ হাজার টাকা, যা এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বিস্তারিত পড়ুন

৩. মসলার বিশ্বজয় ও ৫ বিলিয়ন ডলারের সম্ভাবনা: বর্তমানে বিশ্বের ৪০টি দেশে বাংলাদেশের মসলা রপ্তানি হচ্ছে। স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজসহ বিভিন্ন কোম্পানি মিশ্র মসলার বাজার সম্প্রসারণ করছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কীটনাশক মুক্ত উৎপাদন ও সঠিক নীতি সহায়তা পেলে আগামী ৩-৫ বছরে কৃষি রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।

🌟 এই সপ্তাহের হাইলাইট

বাংলাদেশি কৃষিপণ্যের বিশ্বজয়: ১৪৮ দেশে রপ্তানি ও বিলিয়ন ডলারের হাতছানি

বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানিতে গত এক দশকে ঘটে গেছে এক নীরব বিপ্লব। একসময়ের সীমিত বাজার এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ১৪৮টি দেশে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য মিলিয়ে রপ্তানি আয় ছাড়িয়েছে ১.৫০ বিলিয়ন (১৫০ কোটি) ডলার

কৃষকই মূল নায়ক: এই বিশাল সাফল্যের নেপথ্য কারিগর আমাদের প্রান্তিক কৃষকরা। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য শিল্পের ৮০ শতাংশ কাঁচামালই আসে সরাসরি কৃষকের মাঠ থেকে। অর্থাৎ, ফরিদপুর বা বগুড়ার কৃষকের উৎপাদিত ফসল আজ আন্তর্জাতিক ভ্যালু চেইনের গর্বিত অংশ।

বিশ্ববাজারে চাহিদশীর্ষে যা: বাংলাদেশি আম, হিমায়িত সবজি, পাটজাত মোড়ক, সুগন্ধি চাল, মসলা, মধু এবং ড্রাই ফুড (বিস্কুট, চানাচুর) এখন কুয়েত থেকে লন্ডন—সবখানেই জনপ্রিয়। বিশেষ করে ‘ড্রাই ফুড’ রপ্তানি বাড়ছে জ্যামিতিক হারে।

সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ:

  • ভবিষ্যৎ: ২০৩০ সালের মধ্যে এই বাজার ৬০০ কোটি ডলার ছাড়াবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।

  • উদ্যোক্তা: প্রাণ, স্কয়ার, এসিআই-সহ প্রায় ২৫০টি কোম্পানি এবং অসংখ্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এখন রপ্তানি যুদ্ধে শামিল।

  • করণীয়: এলডিসি (LDC) উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণ (Quality Control) ও ব্র্যান্ডিংয়ে এখন থেকেই জোর দিতে হবে।

বাংলাদেশের কৃষি এখন আর শুধু দেশের খোরাক নয়, বরং বিশ্বজয়ের হাতিয়ার। 🇧🇩🚀

🌏 রপ্তানি ও বাজার সম্ভাবনা

১. ফলের বিলিয়ন ডলারের বাজার: হাতছানি দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য 🥭

বাংলাদেশের উর্বর মাটিতে আম, কাঁঠাল, আনারস প্রচুর ফললেও আন্তর্জাতিক বাজারে আমরা এখনো পিছিয়ে। অথচ ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

  • বাস্তব চিত্র: দুবাইতে মাত্র ৫০০ গ্রাম টিনজাত তালের শাঁসের দাম ৭-৯ ডলার! কাঁঠালের কোয়ার দাম আরও বেশি।

  • সুযোগ: আমাদের প্রাকৃতিকভাবে উর্বর জমি ও ১২ মাসে ফসল ফলানোর সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আমরা এই মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের বাজারে নগণ্য। সঠিক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্র্যান্ডিং করতে পারলে বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব।

২. বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ‘লাল সোনা’র (চুকাই) কদর 🌺

রাস্তার পাশে অবহেলায় জন্মানো ‘চুকাই’ বা রোজেলা (Roselle) এখন বিশ্ববাজারে ‘লাল সোনা’

  • চাহিদা: বছরে প্রায় ১৫,০০০ টন শুকনো রোজেলার বাণিজ্য হচ্ছে। ভেষজ চা (Herbal Tea) ও ফুড কালারের জন্য এর চাহিদা আকাশচুম্বী।

  • শীর্ষ বাজার: জার্মানি 🇩🇪 ও যুক্তরাষ্ট্র 🇺🇸 বর্তমানে এর সবচেয়ে বড় আমদানিকারক।

  • করণীয়: গতানুগতিক ফসলের বাইরে গিয়ে রপ্তানিমুখী এই ফসল চাষে কৃষকরা একটু সচেতন হলেই আন্তর্জাতিক বাজারের বড় অংশীদার হতে পারে বাংলাদেশ।

🏡 ছাদবাগান কর্নার

ছাদবাগানকে নান্দনিক করার ৪টি সহজ টিপস

শখের ছাদবাগানটি কেবল গাছ লাগানোর জায়গা নয়, এটি হতে পারে আপনার প্রশান্তির নিড়। বাগানকে আরও আকর্ষণীয় ও সুন্দর করে তুলতে এই টিপসগুলো মেনে চলতে পারেন:

  • ছোট ছোট ‘পকেট গার্ডেন’ তৈরি করুন: পুরো ছাদ এলোমেলো না করে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে উদ্যান তৈরি করুন। একপাশে সবজি, একপাশে ফুল এবং অন্যপাশে ফলের গাছ লাগিয়ে বৈচিত্র্য আনুন।

  • উচ্চতার ব্যবহার (Vertical Layering): সব টব মাটিতে না রেখে কিছু টব স্ট্যান্ডে বা তাকে (Shelf) সাজান। ছোট-বড় উচ্চতার এই বিন্যাস বাগানকে দেখতে আরও ঘন ও সুন্দর করে তোলে।

  • আলোকসজ্জা বা লাইটিং: সোলার লাইট বা ছোট এলইডি (LED) লাইট ব্যবহার করে রাতে বাগানকে মায়াবী করে তুলুন। এটি সন্ধ্যার আড্ডার পরিবেশকে বদলে দেবে।

  • সৃজনশীল টব ও সাজসজ্জা: শুধু মাটির টব নয়; কাঠের বাক্স, বাঁশের ঝুড়ি, এমনকি পুরোনো চায়ের কেটলি বা বালতিকে রং করে টব হিসেবে ব্যবহার করুন। এতে বাগানে আসবে শৈল্পিক ছোঁয়া।

🌱 মৌসুমী টিপস

টমেটো ও মরিচ আবাদের স্প্রে সিডিউল: সুস্থ ফসলের পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন

টমেটো ও মরিচ চাষে রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে সঠিক বালাইনাশক প্রয়োগ করলে ফলন বাড়ে এবং ফসলের ক্ষতি কমে। নিচে চারা রোপণ থেকে শুরু করে ফল তোলা পর্যন্ত একটি কার্যকরী স্প্রে সিডিউল বা তালিকা দেওয়া হলো। স্প্রে শুরুর সময়: চারা রোপনের ১০-১২ দিন বয়স থেকে স্প্রে করা শুরু করতে হবে। এরপর অবস্থাভেদে প্রতি ৬-৭ দিন বা ৭-১০ দিন পরপর স্প্রে অব্যাহত রাখতে হবে। বিস্তারিত

👩🌾 উদ্যোক্তার গল্প

ভূমিহীন শ্রমিক থেকে ‘বীজ সুলতান’: বছরে ফলান ১৬ টন বীজ!

নিজের এক শতাংশ জমিও নেই, অথচ তাকে সবাই চেনে ‘বীজ সুলতান’ নামে! কুমিল্লার দেবীদ্বারের কাবিলপুর গ্রামের রফিক আহমেদ প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে শূন্য থেকেও আকাশ ছোঁয়া যায়।

সংগ্রাম থেকে সাফল্যে: একসময়ের জুট মিলের শ্রমিক ও চরম দারিদ্র্যের শিকার রফিক ২০০৪ সালে মাত্র ২ কেজি ধানের বীজ দিয়ে বর্গা জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। সেই ছোট্ট উদ্যোগ আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। এখন তিনি ৬ একর বর্গা জমিতে বছরে প্রায় ১৬ টন ধানের বীজ উৎপাদন করেন।

কৃষি গবেষণার বিশ্বস্ত সঙ্গী: রফিক কেবল একজন কৃষক নন, তিনি একজন গবেষকও। কৃষি বিভাগ, বিনা ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (BRRI) সহযোগী হিসেবে তিনি প্রায় ৫০০টি নতুন জাতের ধান পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেছেন। তার উৎপাদিত বীজ এখন রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে।

উদ্যোক্তার কথা: ষাটোর্ধ্ব রফিকের ভাষায়, “ক্ষুধার যন্ত্রণা আজ আমাকে এত দূর এনেছে। তাই আমৃত্যু দেশের মানুষের ক্ষুধা নিবারণের কাজ করে যেতে চাই।”

একজন ভূমিহীন কৃষকের এই অবিশ্বাস্য সাফল্য ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় তার অবদান কৃষি সমাজের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

📩 আপনার প্রশ্ন ও মতামত

কৃষি বা কৃষি প্রযুক্তি নিয়ে আপনার মনে কি কোনো প্রশ্ন আছে? আপনার সমস্যা বা মতামত আমাদের জানান। নির্বাচিত প্রশ্নগুলো পরের সংখ্যায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শসহ প্রকাশিত হবে

✍️ আপনার প্রশ্ন পাঠান: [email protected]

🙌 শেষ কথা

ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য!
পরের বৃহস্পতিবার নতুন আপডেট নিয়ে আবার আসছি 🚀

Keep Reading

No posts found